উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা পাহাড়ে ৯০ শতক জায়গায় চাষ করেছেন মিষ্টি স্বাদের মাল্টা। এর পাশাপাশি চায়না কমলা, থাই আম, ড্রাগন ফল, খেজুরসহ নানা রকম ফলজ গাছের বাগান করেছেন তিনি।
তার এই উদ্যোগ দেখে এলাকার বেশ কিছু যুবক মাল্টা বাগান গড়ে তুলেছেন।
লোকমান আজাদ বলেন, ছোট বেলা থেকে গাছের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি ছিল। স্কুল জীবনে বাড়ির উঠানে দেশীয় আম, জাম, পেঁপে, বড়ইসহ নানান গাছ রোপন করতাম। স্বপ্ন ছিল বিদেশি ফলের চাষ করার।
তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা শেষ করে বেকারত্ব ঘুচাতে প্রথমে মুরগির খামার দিয়ে আমার পথ চলা শুরু। তারপর জৈষ্ঠ্যপুরা পাহাড়ে ৯০ শতক জমি কিনে মুরগি, গরুর খামার, মাল্টা, লেবু ও অন্যান্য গাছের বাগান করি।’
মাল্টা চাষের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে গেলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাকে বলেন, যেহেতু মাল্টা হলো লেবু জাতীয় ফল। এই এলাকায় মাল্টা চাষ করলে ফলন ভালো হবে।
‘তারপরই আমি ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রথমে চারশ গাছ রোপনের মাধ্যমে মাল্টা চাষ শুরু করি। এতে সুফল পেয়ে আরও একশ গাছ লাগাই। আমি হাটহাজারী ফতেয়াবাদ নার্সারি থেকে প্রতিটি মাল্টার কলম গাছ কিনে আনি। এখানে প্রায় ২০ লাখ টাকায় বিনিয়োগ করে পাঁচ শতাধিক গাছ লাগিয়েছি। বর্তমানে এই গাছগুলোর বয়স তিন বছর। দ্বিতীয় বছর থেকে ফল হলেও তৃতীয় বছর থেকে পুরোপুরি বাজারজাত করতে পেরেছি। প্রতিটি গাছ থেকে দেড় থেকে দুইশ মাল্টা পেয়েছি,’ বলেন আজাদ।
মাল্টা চাষে প্রথম বছরে ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে ৪০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছর অর্থাৎ চলতি বছরে ৫০ শতাংশ ফলন পেলেও আগামী বছরে শতভাগ ফলন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
‘সামনে আমি আরও বড় আকারে মাল্টা চাষ করার জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা আশা করছি। যাতে আমার বাগানে উৎপাদিত এ ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করতে পারবে,’ যোগ করেন তিনি।
আজাদ বলেন, ‘মাল্টার পাশাপাশি আমসহ অন্যান্য ফল গাছ লাগিয়েছি। আমার এই উদ্যোগে এলাকার যুবকরা উৎসাহিত হচ্ছে। বর্তমানে কিছু তরুণ আমার দেখাদেখি পাহাড়ে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন।’
এদিকে, পাহাড়ে উৎপাদিত এ মাল্টা খুব মিষ্টি ও রসালো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ফলে স্থানীয় বাজারে ফল বিক্রির চাহিদা বেড়েছে পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানেও বাজারজাত করছেন বলে জানান কয়েকজন বাগান চাষি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ ইউএনবিকে বলেন, গত ২/৩ বছর ধরে বোয়ালখালীতে বারি মাল্টার চাষ হচ্ছে। বেশ কয়েকজন চাষি মাল্টার চাষ করছেন। এরই মধ্যে আমুচিয়া এলাকার লোকমান আজাদ মাল্টা চাষ করে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। ‘আমরা কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সহযোগিতার দেয়ার চেষ্টা করছি,’ বলেন তিনি।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাল্টা চাষে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও চাষিদের মাঝে মাল্টার চারাও বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান সরকারের এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, গত মৌসুমে লোকমান আজাদ ১৮শ কেজি মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৬শ কেজি মাল্টা উৎপাদন করেছে। চলতি বছর তার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।